বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা।

 বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ সম্পর্কে আমাদের সকলের মৌলিক জ্ঞান ও ইতিহাস অবশ্যই জানা প্রয়োজন। তাছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনাটি পরীক্ষার জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিচে রচনাটি লিখা হলোঃ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা।

    সূচনাঃ

    মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। আগে আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ কোন স্বাধীন দেশ ছিলো না।  ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি আমাদের এই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও শান্তির তা শুধু পরাধীন থাকা অবস্থাতেই বোঝা সম্ভব। স্বাধীন থাকলে যেমন একটি শান্তি থাকে তেমনি পরাধীন থাকলে থাকে শুধু গ্লানি। কেউ পরাধীন জীবণযাপন করতে চায় না বা দাসত্বের শৃঙ্খলে বাঁধা থাকতে চায় না। তেমনিভাবে যখন বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানিরা দাস বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলো তখন বাঙালিরা তা চায়নি ও মেনে নেয় নি। তাই তারা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ও মহান মুক্তিযুদ্ধের রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতা।

    পটভূমিঃ

    দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি দেশের জন্ম হয়। ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ ই আগষ্ট ও পাকিস্তানের ১৪ ই আগষ্ট। পাকিস্তান রাষ্ট্রের আবার অংশ ছিলো ২ টি। যথাঃ ১) পূর্ব-পাকিস্তান ও  ২) পশ্চিম পাকিস্তান। আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ ছিলো পূর্ব পাকিস্তান। আমাদেরকে শাসন করতো পশ্চিম পাকিস্তান। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা কখনই আমাদেরকে সমান অধিকার দেয়নি। সকল ক্ষেত্রে চালাতো বৈষম্য। আমাদেরকে নির্যাতন ও নিপীড়ন করতো। রাজস্বের টাকার অধিকাংশই ব্যায় করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে তার খুব কম অংশ খরচ করা হতো। নির্বাচনী ক্ষেত্রে তথা ১৯৭০ সালে আওয়ামী-লীগ নিরঙ্কশ বিজয় অর্জনের পরও হস্তান্নর করেনি ক্ষমতা। আর পূর্ব পাকিস্তানে নিরাপত্তার অভাব , অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবহেলা সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ ও নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপসহ সকল প্রকার বৈষম্য ও নির্যাতন নতুন ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠণের দাবিকে জোড়ালো করে তোলে।

    বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানঃ

    বাঙালি জাতীয়তাবাদের উম্নেষ আগে থেকেই গড়ে উঠেছিলো। তবে তা জোড়ালো হয় ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। যা ২১ শে ফেব্রুয়ারী চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিলো। রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ঐদিন রাজপথে রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ নিহত হয়েছেন নাম না জানা আরো অনেকে। এটি মূলত পাকিস্তানিরা দেশ দখল করার পর তাদের বিরুদ্ধে এক বড় আন্দোলন। তাছাড়া ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ১৯৬২ সালের গণবিরোধী শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন যা বাঙালর মুক্তির সনদ নামে পরিচিত, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী-লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় এই সকল ঘটনাই মূলত বাঙলির জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্ভব ঘটিয়েছিলো যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাহস ও প্রেরণা যোগিয়েছিলো এবং জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলো।

    স্বাধীনতার ঘোষণাঃ

    আওয়ামী-লীগ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কশ বিজয় লাভ করার পরেও পূর্ব পাকিস্তানিরা আওয়ামী-লীগকে নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। বরং এ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এর প্রতিবাদে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে যা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে পরিচিত, সেখানে ১৮ মিনিটের একটি অলিখিত ভাষণ দেন। এই ভাষণের মধ্যে তিনি পরোক্ষভাবেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দেন। তিনি তার বজ্রকণ্ঠ উঠিয়ে বলেন, 'বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তাদের অধিকার চায়', ' রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ', ' এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম  স্বাধীনতার সংগ্রাম'। এমনকি তিনি তার ভাষণে বাংলাদেশ শব্দটি ব্যবহার করেন। আর সে অনুযায়ীই পরে আমাদের দেশের নাম হয় বাংলাদেশ। তারপর ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রত্যক্ষ ও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। তারপর থেকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চট্টগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতারকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে অনেকে পাঠ করেন স্বাধীনতার ঘোষণা।

    অপারেশন সার্চলাইটঃ

    ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্ত্বিক পরিচালিত গণহত্যাকে অপারেশন সার্চলাইট বলে। এটি ইতিহাসের ঘৃণিত একটি গণহত্যা। এইদিন রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, পিলখানাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে নিরপরাধ ও নিরস্র অসংখ্য বাঙালিকে হত্যা করে।

    মুজিবনগর সরকার গঠনঃ

    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের প্রয়োজন হয়। তাই ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। এই দিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত। হয়। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি ও তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা ইউনিয়নের আম্রকাননে এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করে।

    গণযুদ্ধঃ

    মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য ১১ টি সেক্টরে ভাগ করে। স্বাধীনতার ঘোষণার পর  থেকে বাঙালি ছাত্র, জনতা, ইপিআর, পুলিশ ও বাঙালি রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করার পর মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধে রূপ নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে ট্রেনিং নেয় ও জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

    ভারতের সহায়তাঃ

    মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তা অভুলনীয়। তারা ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য ও বাসস্থান দিয়েছে। বাঙালিদেরকে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরী করেছে। তাছাড়া তারা আমাদের অস্র দিয়ে সহায়তা করেছে।

    যৌথ বাহিনী গঠনঃ

    ১৯৭১ সালের ২১ শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মিলে গঠিত হয় যৌথবাহিনী। আর এই যৌথবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ মাত্র ৯ মাসে বিজয় অর্জন করে।

    মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকাঃ

    মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নারীরা যুদ্ধের সময় পুরুষদেরকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাদের অনেকে আবার সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থাসহ আরো অনেকভাবে সাহায্য-সহযোগীতা করেছিলেন।

    উপসংহারঃ

    বাংলাদেশ ৩০ লক্ষ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একটি দেশ। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসবো, মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
    বি,দ্রঃ রচনাটি একটু ছোট করে লিখা হয়েছে। তাই অনেক তথ্য বাদ পরতে পারে। আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
    comment url