ঈদ-উল-ফিতরের দিনের আমলসমূহ।

ঈদ-উল-ফিতরের দিনের আমলসমূহ।

ঈদ একটি আনন্দের দিন। এটি মুসলামানদের উৎসব। বছর ঘুড়ে দুইটি ঈদ আসে। আর এই দিন যেমন আনন্দের তেমনি রয়েছে অনেক আমল। কীভাবে ঈদের-সালাত আদায় করতে হয় ও এই বিশেষ দিনের কিছু আমল নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
ঈদ-উল-ফিতরের দিনের আমলসমূহ।
 ঈদ-উল-ফিতরের দিনের আমলসমূহ।

    ঈদ সম্পর্কিত কিছু কথা।

    ঈদ মানে আনন্দ। এটি মুসলামানদের ধর্মীয় উৎসব। বছরে দুইটি ঈদ আসে। একটি হলো ঈদ-উল ফিতর এবং আরেকটি হল ঈদ-উল আযহা। পুরো রমজানে মুসলমানরা রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের ১ তারিখ পালন করে ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ সকলের জন্য আনন্দ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা মুমিন বান্দাদের জন্য আনন্দের। কেননা ঈদের নামাজ পরে যখন একজন মুমিন ঘরে ফেরে তখন একজন শিশু তার মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় যেমন নিষ্পাপ থাকে সেই মুমিন বান্দাও তেমন নিষ্পাপ হয়ে যায় অর্থাৎ ঈদের আগেই মহান আল্লাহ তায়ালা সকল মুমিন বান্দারেরকে মাফ করে দেন। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, " যারা রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারলো না, তারা ধ্বংস হয়ে যাক"। তাছাড়া অনেক সাওয়াবের অধিকারী হওয়ার একমাত্র মাস হলো রমজান। কেননা এই মাসে আল্লাহ তায়ালা সকল ভালো কাজে ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব দান করেন। তাছাড়া ঈদের দিনের ইবাদতও বেশ সাওয়াবপূর্ণ। আজ আমরা ঈদ-উল-ফিতরের দিনের কিছু আমলসমূহ নিয়ে আলোচনা করবোঃ

    ঈদ-উল-ফিতরের দিনের সুন্নতসমূহঃ

    আমাদের নবি করিম (সাঃ) কে অনুসরণ করাই হলো সুন্নত। আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) ঈদের-দিনে যে কাজ বা আমলগুলো করতেন সেগুলো সুন্নত বলা হয়। নিচে ঈদ-উল-ফিতরের দিনের কিছু সুন্নত উল্লেখ করা হলোঃ

    ১) সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠাঃ ঈদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা সুন্নত। অর্থাৎ ঈদের দিন ফজরের নামাজের পর না ঘুমিয়ে কবর জিয়ারত করা, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যদি।

     ২) মেসোয়াক করাঃ ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মেসওয়াক করা সুন্নত।

    ৩) গোসল করাঃ ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত।

    ৪) সামান্য খাবার খেয়ে ঈদগাহে যাওয়াঃ হালকা খাবার অর্থাৎ মিষ্টিজাতীয় কোন খাবার খেয়ে ঈদগাহের উদ্দ্যেশ্যে রওনা হওয়া।

    ৫) হেঁটে ঈদের নামজে যাওয়াঃ রিকশা বা কোন প্রকার যানবাহন ব্যবহার না করে হেঁটে ঈদের নামজে যাওয়া। এক রাস্তা দিয়ে যেয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরা মুস্তাহাব। যার ফলে অনেক মুসল্লির সাথে কুশলবিনিময় ঘটবে।

    ৬) তাকবির পড়াঃ ( আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর আল্লাহ আকবার ওয়া লিল্লা হিল হামদ ) এই তাকবির পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া।

    ৭) উত্তম পোষাক পরিধান করাঃ নিজ সাধ্যমতো সবচেয়ে উত্তম কাপড়টি পড়া সুন্নত। এই বলে যে নতু কাপড় হয়। বলা হয়েছে উত্তম কাপড় অর্থাৎ নিজ স্বার্থে থাকা সবচেয়ে পরিষ্কার ও উত্তম কাপড়টি।

    ৮) সুগন্ধি বা আতর ব্যবহার করাঃ যখন ঈদগাহে যাওয়া তখন শরীরের মধ্যে বা পোষাকে সুগন্ধি বা আতর ব্যবহার করা সুন্নত।

    ৯) সাদকায়ে ফিতর আদায়ঃ ঈদের নামাজ শুরু হওয়ার পূর্বে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত। ( তবে রমজান মাসের মধ্যবর্তী সময় বা এই মাসে আদায় করলেও কোন প্রকার সমস্যা নেই। অর্থাৎ ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উত্তম।)

    ১০) সর্বদা হাসিখুশি থাকাঃ ঈদ হলো মুমিনের জন্য খুশির দিন। তাই এই দিন সবসময় হাস্যজ্জ্বল থাকা, সকলের সাথে কুশল বিনিময় করা, কোলাকোলি করা, হাত মেলানো ইত্যাদি।

     ঈদের সালাত আদায় করাঃ

    ঈদ-উল-ফিতরের দুই রাকায়াত ওয়াজিব নামাজ রয়েছে। যা খালি ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদুল হারামে পড়া উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন শহরে অধিক পরিমাণে লোক ধারণের জায়গা নেই বলে মসজিদে আদায় করার বিধান রয়েছে।

    কাদের উপর ঈদের সালাত ওয়াজিব?

    যাদের উপর জুমআর সালাত ওয়াজিব তাদের উপর ঈদের সালাত ওয়াজিব। ঈদের সালাত আলাদা ছয় তাকবিরের সাথে ঈমামের সাথে আদায় করতে হয়।

    আদায়ের নিয়মসমূহঃ

    ১) " হে আল্লাহ, আমি এই ঈমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ছয় তাকবিরের সাথে ফরজে কেফায়ার ঈদের ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি"।
    ২) তাকবিরে তাহরিমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধা।
    ৩) ছানা পড়া।
    ৪) অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরের মধ্যে হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দিতে হয়, কিন্তু তৃতীয় তাকবিরের সময় হাঁত বাঁধা। আউজুবিল্লাহ পড়া ও বিসমিল্লাহ পড়া।
    ৫) সূরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সূরা মিলানো।
    ৬) তারপর রুকু, সিজদাহ করার পর ঈমাম সাহেব আবার দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ বলে ক্বিরাত শুরু করবেন, সূরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সূরা মিলাবেন। তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে তিনটি তাকবির দিবেন। ঠিক আগের মতো। তারপর চতুর্থ তাকবিরের সময় রুকুতে চলে যাবেন। তারপর সিজদাহ করার পর তাশাহুদ, দূরূদ পড়ে ও সালাম ফেরানোর মাধ্যমে শেষ করবেন ঈদের সালাত।
    আমাদের সকলের মাঝে ঈদের সালাত আদায়ের রেওয়াজ থাকলেও অনেকে খোৎবা না শুনে বাসায় চলে আছে। কিন্তু উভয়টিই হলো ওয়াজিব।

    খোৎবা শোনা

    আমরা সকলেই ঈদের সালাত আদায় করি। কিন্তু অনেকেই ঈদের নামাজের খোৎবা না শুনে বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে ঈদের সালাত আদায় করা যেমন ওয়াজিব। তেমনি খোৎবা শোনাও ওয়াজিব।
    আশা করি আপনারা সকলে উপরে উল্লেখ করা নিয়ম অনুযায়ী ঈদের সালাত আদায় করবেন ও অনেক সাওয়াবের অধিকারী হবেন।
    সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
    comment url