করোনা ভাইরাসের সাতকাহন

 করোনা ভাইরাস ও এর সম্পর্কে বিস্তারিত।

করোনা ভাইরাস বা (COVID-19) বর্তমানে বিশ্বে আলোড়ন ও ভিতী সৃষ্টিকারী একটি ভাইরাস। পুরো পৃথিবী এখন স্থবির। কখন করোনা ভাইরাসের থবায় কে কোন সময় আক্রান্ত হয় তার কোন ঠিক নেই। করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া হয় লকডাউন। আর এই লকডাউন যারা সরকারি চাকুরীজিবী তাদের জন্য খুশির সংবাদ হলেও যারা খেটে খাওইয়া মানুষ তাদের জন্য বিরাট কষ্টকর। আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আর আমাদের এই দেশ বিশ্বের মুখে যখন উন্নতির মুখখানা প্রদর্শন করবে তখনই দেখা দিল এক মহামারি। আর যে মহামারিটির নাম আমরা সকলেই জানি ও উল্লেখ করেছি অর্থাৎ করোনা ভাইরাস বা (COVID-19)। আর আজ আমরা এই করোনা ভাইরাস  বা (COVID-19) সম্পর্কে জানবো। কীভাবে, কোন দেশ থেকে হলো উৎপত্তি, এ ভাইরাস কীভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, চারপাশে ছড়িয়ে পরে ও কীভাবে করোনা ভাইরাস বা (COVID-19) আমাদের শরীরের ক্ষতি সাধন করে।
করোনা ভাইরাস।
করোনা ভাইরাস

    করোনা ভাইরাসের আদি-অন্তঃ

    তো প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কে।

    তো প্রশ্ন হলো এটার উৎপত্তি কীভাবে? কেননা ২০১৯ এর আগে তো কোন মানুষ এই ভাইরাসের নাম শুনেনি বা এ ভাইরাসের নাম শুনেনি। যদিও এটি ছিলো। কিন্তু তা ছিলো অন্য প্রণীর শরীরে। আর সকলে এটা জেনে অবাক হবে যে, সম্ভবত এই করোনা ভাইরাস কোন মেরুদন্ডী প্রাণী থেকেই এসেসছে। আর তা হতে পারে কুকুর অথবা বানর।
    যা হোক, করোনা ভাইরাস বা (COVID-19) ভাইরাসটি সর্বপ্রথম চীনের উহানে ধরা পরে কোন মানুষের শরীরে। আর সকলে এটা জেনে অবাক হবে যে, এই করোনা ভাইরাস কোন মেরুদণ্ডী প্রাণী থেকে এসেছে। কিন্তু কেউ নিদৃষ্ট করে বলতে পারে না মূলত এটা কোন প্রাণী থেকে এসেছে। তবে বেশিরভাগই ধারণা করেন এই  করোনা ভাইরাস বাদুর বা কুকুর থেকে এসেছে। চীনের বিভিন্ন ল্যাবে এই ভাইরাসটি নিয়ে অনেক গবেষণা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলে। আর যার ফলে তারা করোনা ভাইরাসের জেনেটিক বা জিনগত বিভিন্ন তথ্য বের করতে সফল হয়। আর তারা ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসের ২১ তারিখ এই করোনা ভাইরাস জেনেটিক বা জিনগত তথ্য বের করেন। আমরা জানি ভাইরাসের গঠন হলো প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিডের সমন্বয়ে। আর এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। কেননা এই করোনা ভাইরাসের সারফেসে থাকে স্পাইক প্রোটিন। আর অবাক হবার বিষয় যে, এই স্পাইক প্রোটিনটিই ভাইরাসের মূল কোষটিকে ধরে রাখে। ভাইরাসের এই প্রোটিনটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারলেই ভাইরাস মারা যাবে। আর এমনটা কেউ বানাতে পারলে সেটা হবে করোনা ভাইরাসের ঔষধ। তাছাড়া দেহে প্রচুর পরিমাণে এন্টিবডি তৈরী করেও করোনা ভাইরাসকে প্রতিকার করা যায়। এসবকিছু তৈরীর জন্য ব্যপক গবেষণা চলছে।

    কীভাবে ছড়িয়ে পরে এই করোনা ভাইরাস?

    আমরা ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছি করোনা ভাইরাস হচ্ছে অতি ভয়ংকর একটি ভাইরাস। আর এটি অতি সহজে ছড়িয়ে পরে। যেমনঃ আমরা যখন হাঁচি কিংবা কাশি দুই, যখন থুথু ফেলি আবার বা যখন শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়ি। আর আমরা তো জেনেছি, করোনা ভাইরাস বা (COVID-19) ভাইরাসটি কোন একটা প্রাণী থেকে আমাদের তথা মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। আর এই ভাইরাসটি অতি সহজে এক মানুষের শরীর থেকে অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আর যাতে অতি সহজে একজন থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়। যেমনঃ 'ক' একজন ব্যক্তি যার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আছে। আর এই ভাইরাস কিন্তু সাথে সাথে এর নমুণা প্রকাশ করে না। সময়ের সাথে সাথে এটি প্রকাশ করে এর লক্ষণ। যা হোক, সেই 'ক' ব্যক্তিটি অজান্তেই তার পরিবার বা অন্যান্য লোকদের সাথে মিশবে। যদি অন্যন্য মানুষদের 'খ','গ' ও 'ঘ' ধরি তারাও কিন্তু সংক্রমিত হবে। আবার ঐ'খ','গ' ও 'ঘ' আরো লোকের সাথে মেশার কারণে সংক্রমিত হবে 'ঙ','চ' ও 'জ'। আর এই সংক্রমনের বিষয়টাকে এমনই ধরা যেতে পারে। কেননা এরকমই সমানুপাতিক হারে বেড়ে যেতে থেকে করোনা ভাইরাস। বর্তমান বিশ্বে তো এখন চলছে হাহাকার অবস্থা। লাশ আর লাশের বন্যা। তাছাড়া, যারা বড়লোক এবং এয়ার কন্ডিশনারের নিচে ঘুমায় তাদের এখানে অর্থাৎ তাপানূকুল পরিবেশে  করোনা ভাইরাস থাকতে পছন্দ করে ও অতি সহজে ছড়ায়।

    কীভাবে এই ভাইরাসটি আক্রমণ করে?

    আমরা সকলেই হয়তো জানি, সর্বপ্রথম জার্মানি এই করোনা ভাইরাসের হটবেড ছিলো। আর তখন সেখানে সমীক্ষা চলে। সেই সমীক্ষায় দেখা যায় এই ভাইরাস প্রথমে গলায় আক্রমণ করে। আর যার ফলে আমরা গলা ব্যথা অনুভব করি। তারপর এই ভাইরাসটি সংক্রমিত হয় আমাদের ফুসফুসে। আর তখনই  করোনা ভাইরাস যে কতটা ভয়ংকর তা প্রকাশ পায়। তখন আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ও অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বেশি বয়স্ক লোকেদের ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক ঝুঁকি। তাছাড়া যারা অন্যন্য রোগ যেমনঃ ডায়েবেটিস, প্রেসার ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত তাদের জন্যও এই ভাইরাসটি অনেক ক্ষতিকর। তাদের মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। প্রতিদিন যে এত এত মানুষ মারা যাচ্ছে, সত্যি কথা বলতে এটা আমাদের কাছে সংখ্যা বলে মনে হয়। কিন্তু যার আপনজন মারা যায় সে শুধু বোঝে। পরিবারের কর্তাকে হারিয়ে বসে। যা হোক, টপিকের বাইরে যাওয়ার কোন দরকার নেই।

    করোনা ভাইরাসের লক্ষণঃ

    আমরা জানি, কোন ভাইরাস বা জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে লক্ষণ প্রকাশ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বর দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তা কিন্তু ভিন্ন নয়। করোনা যখন প্রবেশ করে তখন আমাদের শরীরে প্রচণ্ড পরিমাণে জ্বর দেখা যায়। সাথে দেখা দেয় কাশি এবং যা হলো শুষ্ক কাশি। তারপর দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। বলা হয়ে থাকে, করোনা ভাইরাসের উপসর্গগুলো প্রকাশে ৫ দিনের মতো সমইয় লেগে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) World health organization বলে যে এই ভাইরাসটির ইনকিউবেশন টাইম বা স্থায়িত্বকাল ১৪ দিন। তবে আবার কিছু গবেষকেরা ভিন্ন মতবাদ পোষণ করেন। তারা বলেন, এই ভাইরাসটির ইনকিউবেশন টাইম বা স্থায়িত্বকাল ২৪ দিন।

    করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়।

    করোনা ভাইরাস আমাদের শরীরে যেহেতু অজান্তেই প্রবেশ করে আর যেহেতু এতে আমাদের কোন হাত নেই তাই আমাদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে। কিছুক্ষণ করপর সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। হ্যান্ড স্যনিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।  পরিষ্কার রাখতে হবে আমাদের চারপাশ। ভাইরাসের লক্ষণগুলো প্রকাশের সাথে সাথে টেস্ট করাতে হবে।  অবশ্যই ১৪ দিনেরে কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি শক্ত রাখতে হবে আমাদের মনোবল। কারণ মনোবল জিনিসটা অনেক বড় একটা জিনিস। মনোবল থাকলে অসম্ভব কাজও অতি সহজে করা যায়। যেমনঃ যদি আমাদের দেশের গ্রামের লোকদের কথাই ধরেন। এখনো আমাদের দেশের অনেক মানুষই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানে না। উপমা দিয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতাটাই প্রকাশ করি। আমি আমার গ্রামে একবার গিয়েছিলাম। সেখানে একজনকে বললাম দেশে তো ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তো আপনার কি অবস্থা। তখন তিনি বলে উঠলেন,''ধ্যুর ব্যডা, কিয়ের ভাইরাস ভুইরাস। এইতা কীতা কয়। এটি মাইনিসেই নাম দিয়া থইছে আন্তাদি"। কিছু মনে করবেন না, আমাদের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় বললাম। এমন ঘটনার মতো আরো অনেক ঘটণা আরো ঘটে। যা হোক, অনেকে বলে এটা নিজের ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। তাই হলে হবে। এ কারণে অনেকে সচেতন থাকে না। মনে রাখতে হবে, "মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা" আমাদেরকে একটা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন। এটা দিয়ে আমরা করোনা ভাইরাসের শিকার হতে পারি বা তা থেকে বাঁচতে পারি। তাছাড়া, অনেকে বলে, কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সে নাকি কাফের। এমন ফতোয়া দেওয়া গুনাহের কাজ। কেননা রোগবালাই আল্লাহ প্রদত্ত ও আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অপব্যবহারের কারণে হতে পারে। ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, অনেক সাহাবিরা বিভিন্ন মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে। তাই বলে কী তাদের কাফের বলা যাবে? তাই বলা যায় এসকল কথা  সঠিক নয়। বিভিন্ন বড় বড় আলেমেরা এটা সম্পর্কে বলেছেন।

    সকলে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানুন। সচেতন হন। যারা মুসলমান তারা আল্লাহর উপর ভরসা করুন ও নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন। ইনশাআল্লাহ, করোনা ভাইরাসকে আমরা প্রতিহত করতে পারবো ও আল্লাহ তায়ালা এটি উঠিয়ে নিবেন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
    • Comment
      Comment May 5, 2021 at 7:33 PM

      Very good

    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন
    comment url